ছবি: কবি সৈয়দ আসলাম হোসেন |
অধ্যক্ষ মো: মাজেদ আহমেদ
( মাজেদ আহমেদ চঞ্চল)
সৈয়দ আছলাম হোসেন সিলেটের জকিগঞ্জের একজন জনপ্রিয় কবি।
তিনি আল্লাহ পাক,রাসুল সা. থেকে শুরু করে ফুল,পাখি,নদী,নারী,যাপিত জীবন,সমাজ ইত্যাদি সকল বিষয়েই কবিতা লেখেন।
ইতিমধ্যে তাঁর বই বেরিয়েছে ১০টি। সাম্প্রতিক সময়ে একক ভাবে কেউ ১০টি বই লিখেছেন,এমনটি আমাদের জানা নেই।
আজ তাঁর ১০ম বই '৪০ লাইনের কবিতা' নিয়ে কথা বলব। তাঁর বয়স ৪০ এ উপনীত হওয়ার প্রেক্ষিতে এই চল্লিশ লাইনের কবিতার বইয়ের আত্মপ্রকাশ বলে কবি ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন।
ছবি: ''চল্লিশ লাইনের কবিতা'' বই |
এই কবিতার বইয়ে মোট কবিতা ৫৬টি। সেগুলো হচ্ছে:
বিচার দিনের মালিক-৯,দয়াল নবীর সুপারিশ-১০,পরিচয়-১১
জান্নাতিদের আসরে-১২
জান্নাতিদের দলে-১৩,কোরবাণী-১৪
ঈদ আসে দুইবার-১৫,মানুষ হবো কবে-১৬
আশা এখন বদলে গেছে-১৭
চুরি হোক বন্ধ-১৮,বাবা-১৯
তিন ভাই তিন দেশে-২০,পুরস্কার-২১
বইমেলা-২২,বেগম রোকেয়া-২৩
ফেইসবুক-২৪,লজিং মাষ্টার হলে-২৫
বউ শাশুড়ি-২৬,তিন কন্যা দান-২৭,সাগর জলে-২৮
ছেলে ধরা-২৯,বর্ষা-৩০,বাল্য বিয়ে বন্ধ-৩১
কবিতারা বিশ্ব ঘুরে-৩২
জাফর স্যারের প্রসব ব্যথা-৩৩
ভুল করেছি-৩৪,ঋণের বোঝা-৩৫,চন্দনাইশ-৩৬বদলি হয়-৩৭,খুশি-৩৮,সেবা-৩৯,বলবো কাকে মনেরকথা-৪০,শীতএসেছে-৪১,ভালোবাসি-৪২,নারীরাই মা হয়-৪৩,সবাই করে নাটক-৪৪,দেখতে চাই-৪৫,অর্ধেক মন-৪৬,বদলে গেছে-৪৭,চল্লিশ-৪৮,নাই নাই নাই-৪৯,অভাব-৫০,বন্যা-৫১,মাঝে মাঝে-৫২,লেখাপড়া চাই-৫৩,কবিতা-৫৪,মানি না-৫৫,রুহিঙ্গাদের ঝুঁকি-৫৬,খুন করি বন্ধ-৫৭,হরিণ ছানা-৫৮,ঘর জামাই-৫৯,বন্ধু যখন শত্রু হয়-৬০,নির্বাচন-৬১,এ যুগের হাতেম তাঈ-৬২,আমার জন্ম দিন-৬৩,খাদক-৬৪।
কবি তাঁর লেখার গতানুগতিক ধারায় স্রষ্টা থেকে শুরু করে তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কবিতাগ্রন্থটি সাজিয়েছেন।
এই বইয়ের প্রথম কবিতা 'বিচার দিনের মালিক'। ৪০ লাইনের কবিতায় কবি আল্লাহ পাকের শান ও মানকে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সুন্দর ভাবে।
কবি তাঁর কবিতার প্রথমেই আঁকুতি জানিয়েছেন এ ভাবে :
পরের কবিতা 'দয়াল নবীর সুপারিশ' এ কবি রাসুলে পাকের প্রতি তাঁর ভালোবাসা জানাতে গিয়ে বলেছেন :
/দুনিয়াদারীর মিছে মায়ায়/ ব্যস্ত থাকে যারা,/ ভুল পথের পথিক যেন/ এই দুনিয়ায় তারা।/ একই কবিতায় তিনি অন্যত্র বলেছেন :
/আল্লাহ্-নবীর পাগল যারা/ তাদের জীবন সফল,/ ফরজ নামাজ সবই পড়/ পড় সুন্নত নফল।/(দয়াল নবীর সুপারিশ : পৃ.১০)।
কবির জীবনে বড় হওয়ার আশা ছিল। তাই তিনি অবলীলায় বলেছেন :
/আশা ছিল বড় হয়ে/কিনবো দামী গাড়ি,/ আশা ছিল কিনবো আমি/ রাজধানীতে বাড়ি।/
কিন্তু জাগতিক হালচাল ও সমাজের দুরাবস্থা দেখে তাঁর আশা পাল্টে যায়। তিনি তাই একই কবিতায় বলে উঠেন :
/আশা এখন বদলে গেছে/ অল্পতে হই খুশি,/ কালো টাকা না আনিলে/ হয় না দোষাদোষী।/(আশা এখন বদলে গেছে : পৃ. ১৭)।
কবি সৈয়দ আছলাম হোসেন এই কবিতার ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ে নিয়েও কবিতা লিখেছেন। কবিরা তিন ভাই তিন দেশে বাস করেন। তিনি তাঁর 'তিন ভাই তিন দেশে' কবিতায় অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় তা ব্যক্ত করেন এই ভাবে :
/তিন ভাই থাকি এখন/ভাগ্যমত তিনদেশে,/আমি থাকি মাতৃভূমি/ অন্য দু'জন ভিনদেশে।/
লন্ডন আর আফ্রিকায়/ দু'জন করে ভোজ,/আমি হলাম বড় ভাই/ কাব্য লেখি রোজ।/
মাতৃভূমি থেকে আমি/দেশকে নিয়ে লেখি,/ রঙ্গিন এই দুনিয়াটা/চোখ মেলিয়ে দেখি।/ (তিন ভাই তিন দেশে: পৃ.২০)।
আমাদের সমাজে ফেইসবুক এখন সবার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর ভালোমন্দ নিয়েও কবি কবিতা লিখেছেন তাঁর এই বইয়ে। ফেইসবুকের কথা বলতে গিয়ে তিনি সহজে উচ্চারণ করেছেন :
/এই সমাজের সবাই আজ/ ফেইসবুকের মাঝি,/ বিশাল মাপের স্যার সেজে/ শিক্ষা দিতে রাজি।/
ভালো মন্দ দুটোই আছে/ এই মোবাইলের ভিতর,/ ভালো মন ভালো খুঁজে/মন্দ খুঁজে ইতর।/(ফেইসবুক : পৃ.২৪)।
কবি আছলাম কবিতার চাষবাস করেন দীর্ঘদিন থেকে। অনেকের মনে আসে,কবিতারা কোথায় থাকে?কবি এই প্রশ্নের সহজ সমাধান দিয়েছেন তাঁর চল্লিশ লাইনের কবিতায়। এ প্রসংগে কবি বলেছেন :
/কবিতারা কোথায় থাকে /যদি চাও জানিতে,/ শীত সকালের আলোয় খোঁজ,/ কচুপাতার পানিতে।/
কবিতারা জেগে থাকে/ সবাই ঘুমে গেলে,/ মধ্যরাতে জেগে ওঠে/ কবির নাগাল পেলে।/(কবিতারা বিশ্বঘুরে : পৃ.৩২)।
ভালোবাসার প্রতি সকল কবির মত কবি আছলামও ভালোবাসা দেখিয়েছেন। ভালোবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশে কবি উল্লেখ করেছেন :
/ভালোবাসি বাগানের/ সাজানো ফুলকে,/ ভালোবাসি ধরে দিলে/ অনিচ্ছার ভুলকে।/ একই কবিতার অন্যত্র তিনি লিখেছেন :
/ভালোবাসি নবীজীকে/ সাথে তার কর্ম,/ ভালোবাসি শতভাগ/ ইসলাম ধর্ম।/(ভালোবাসি : পৃ.৪২)।
মানুষের জীবনের পরম প্রিয় এক অনুষঙ্গ। এই বন্ধু কখনো কখনো স্বার্থের টানে শত্রু হয়ে যায়। তখনকার অনুভূতি কবি ব্যক্ত করেছেন এই ভাবে :
/বন্ধু যখন শত্রু হয়/মনে লেগে ভয়,/ মিলে মিশে শত কর্মের/ গোপন প্রকাশ হয়।/
বন্ধু শত্রু হলে কী করতে পারে তা ও তিনি উচ্চারণ করেছেন এ ভাবে :
/মুছিয়ে দিতে চাইবে সকল/আছে যত অর্জন,/ দুধের মাছি বুঝতে পারলে/ আগে করো বর্জন।/(বন্ধু যখন শত্রু হয় : পৃ.৬০)।
কবির এই বইয়ের শেষ কবিতা 'খাদক'। আমাদের সমাজের একটি অসংগতি নিয়ে তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় ৪০ লাইনের এই কবিতা লিখেছেন। বাস্তব সম্মত এ কবিতাটি পড়লে পাঠকের ভালো লাগবে বলে কবিতাটি হুবহু তুলে ধরছি।
/দাওয়াত ছাড়া মেহমান/ লজ্জার নাই শেষ,/ বিয়ের দিনের খাদক দল/ ভরে গেছে দেশ।/
মাঝে মাঝে ধরা পড়ে/ মাথা করে নিচু,/ ঠিকানাটা খুঁজে নিতে/ মানুষ ধরে পিছু।/
লজ্জা শরম ভুলে গিয়ে/ বন্ধু ক'জন মিলে,/ অপেক্ষাতে বসে থাকে/ যাবে ফোন দিলে।/
বর কনের পরিচিতি/ একটু নেয় খুঁজ,/ ফোনে ফোনে কথা বলে/ শুরু করে ভোজ।/
/কেহ যখন প্রশ্ন করে/ তোরা কোন পক্ষ,/ চিন্তা করে জবাব দেয়ার/ নেতা আছে দক্ষ।/
/সন্দেহটা বাড়ে যখন/ উভয় পক্ষ ডেকে,/ প্রশ্ন করে জবাব চায়/ চোখে লজ্জা মেখে।/
দামী দামী কাপড় পরে/ টাই গলায় ঝুলে,/ মাঝে মাঝে জবাব দেয়/ সেন্টার গেছি ভুলে।
মানুষ এখন জেনে গেছে/ খাদক দলের তথ্য, / সহজেই খুঁজতে পারে/ পরিচয়টা সত্য।/
/দাওয়াত ছাড়া মেহমান/ হয় যে খাওয়া চুরি,/এমন খাদক বাড়ছে এখন /দেশে ভুরি ভুরি।/
/খাদক দল মনে রেখো/ আল্লাহ্ রিজেক দাতা,/ হারাম খাবার দিচ্ছে ভরে/ আমলনামার খাতা।/
সুন্দর ও শোভন প্রচ্ছদ ও ছাপা বইটিকে বেশ নান্দনিক করে তুলেছে। বইটির প্রচ্ছদটিও অনন্য সুন্দর। জুঁই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির মূল্য ২৪০ টাকা মাত্র।আমরা বইটির প্রচার ও প্রসার কামনা করছি।
( লেখক পরিচিতি)
অধ্যক্ষ মো: মাজেদ আহমেদ
( মাজেদ আহমেদ চঞ্চল)
© ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ও জিইডি টিচার, আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি,সিলেট।
© রিসোর্স টিচার ২০০০--চলমান)
সীমান্তিক টিচার্স ট্রেনিং কলেজ,
(জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন),
সিলেট।
© কোষাধ্যক্ষ
বাংলাদেশ স্কাউটস, সিলেট অঞ্চল
(সিলেট,হবিগঞ্জ,মৌলবীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট মেট্রো জেলা)।
© অধ্যক্ষ (১৯৯৮ -- ২০২০)
লুৎফুর রহমান হাইস্কুল এন্ড কলেজ
আটগ্রাম, জকিগঞ্জ, সিলেট।
© চেয়ারম্যান/চেয়ারপার্সন
২০০০--২০১৮
সীমান্তিক (জাতীয় পর্যায়ের এনজিও--স্থাপিত : ১৯৭৯ খৃ.),
সিলেট।
0 Comments